রাজধানীতে ‘গরিবের বাজার’-এর দশ টাকার সবজি
ঢাকার পুরান শহরের কচুবাজারে বাজার করতে আসেন বুড়িগঙ্গা নদীর মাঝি সুমন পাল। ছোট পাটের ব্যাগে করে তিনি কিনেছেন আলু, পেঁয়াজ, মরিচ এবং কদু, যার প্রতিটি মাত্র দশ টাকায়! বর্তমান বাজারে যেখানে মরিচের ১০০ গ্রামও এত কম দামে পাওয়া কঠিন, সেখানে এমন কম মূল্যে সবজি কেনা সম্ভব কীভাবে?
এ বাজারের বিশেষত্ব হলো, সব ধরনের সবজি এখানে মাত্র দশ টাকায় বিক্রি হয়, কিন্তু এটি কেজি বা বড় পরিমাণে পাওয়া যায় না। সদরঘাটের এই বাজারকে ‘গরিবের বাজার’ নামে ডাকা হয়, যেখানে ছোট ছোট ভাগে ভাগ করা সবজি বিক্রি করা হয়। মাছের বাজারে যেমন ভাগে ভাগ করে মাছ বিক্রি করা হয়, এখানেও একইভাবে সবজি বিক্রি করা হয়।
নিম্নবিত্তের জন্য আশ্রয়স্থল
কচুবাজারে সাধারণত নিম্ন আয়ের মানুষজন বাজার করতে আসেন। রিকশা-ভ্যানচালক, শ্রমিক, ভিক্ষুক থেকে শুরু করে নৌকার মাঝি—এই বাজারে তাদেরই ভিড় দেখা যায়। এখানে বেশিরভাগ বিক্রেতা নারী ও শিশু, যারা আড়ত থেকে সংগ্রহ করা সবজি এনে বিক্রি করেন। এসব সবজি সাধারণত লঞ্চ থেকে অবশিষ্ট থাকা বা কিছুটা নষ্ট হয়ে যাওয়া সবজি থেকে সংগ্রহ করা হয়।
এ বাজারের বিক্রি হওয়া সবজিগুলোর বেশিরভাগই ভালো সবজি থেকে বাছাই করার সময় বাদ দেওয়া আধপচা সবজি। বিক্রেতারা এসব সবজির নষ্ট অংশ কেটে ফেলে দিয়ে বিক্রি করেন।
বাজারের ইতিহাস
ঠিক কবে থেকে এই বাজারের প্রচলন শুরু হয়েছে, তা নিয়ে নির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই। তবে স্থানীয়দের মুখে শোনা যায়, শ্যামবাজারের শুরু থেকেই এই বাজারের যাত্রা। বাজারটি মূলত পথশিশুদের জন্য একটি আয়ের উৎস হয়ে উঠেছে। নাসিম নামে এক পথশিশু বলেন, আগে নষ্ট সবজি সহজে পাওয়া যেত, কিন্তু এখন তা পাওয়া কঠিন। এখন পুরো দিন কুড়িয়ে বিক্রি করলেও তেমন লাভ হয় না।
ক্রেতাদের অভিজ্ঞতা
ভ্যানচালক মজিদ রহমান তিন সন্তান ও স্ত্রী নিয়ে থাকতে এসেছেন সূত্রাপুর থেকে। তিনি প্রতিদিন ৩০০-৪০০ টাকা আয় করেন, কিন্তু নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের মূল্যবৃদ্ধির কারণে পরিবার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। মজিদের মতে, এত কম আয়ে দৈনন্দিন খরচ সামলানো তার জন্য প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিক্রেতাদের সংগ্রাম
বরিশাল থেকে আসা সীমা আক্তার গত দশ বছর ধরে এখানে সবজি বিক্রি করছেন। তিনি জানান, আগের মতো লাভ নেই। সব কিছুর দাম বাড়ছে, আর মানুষও আগের মতো এই বাজারে আসে না। তবুও সীমা এই বাজারে টিকে থাকার চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
‘গরিবের বাজার’ ঢাকার দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য এক ধরনের আশ্রয়স্থল হয়ে উঠেছে, যেখানে কম মূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় সবজি পাওয়া যায়, যদিও লাভের হার দিন দিন কমে আসছে।
সমাপ্তি
‘গরিবের বাজার’ শুধু দরিদ্র মানুষের জন্য বাজার নয়, এটি একটি জীবনের গল্প। যেখানে সংগ্রাম, বেঁচে থাকার আশা এবং প্রতিদিনের কঠিন বাস্তবতার সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলার চেষ্টা মিলে যায়।