মুখের ক্যানসার রোধে চাই সচেতনতা

আমাদের দেশে মেয়েদের জরায়ু ও স্তন ক্যানসার আর ছেলেদের ফুসফুস ক্যানসারের পরই মুখ গহ্বরের ক্যানসারের রোগী বেশি দেখা যায়।

জিব, তালু, জিবার নিচে, গালের ভেতরের অংশ, ঠোঁট, মাড়ি বা মুখের যেকোনো স্থানে বেড়ে উঠতে পারে ক্যানসার। সে কারণে মুখে যেকোনো ধরনের ঘা, ক্ষত, গোটা, স্বাভাবিক রঙের পরিবর্তন, অতিরিক্ত ঝাল অনুভূতি বা যেকোনো অস্বাভাবিকতা দুই সপ্তাহের বেশি স্থায়ী হলেই এর ধরন নিশ্চিত করতে হবে।

ক্যানসারের কারণ সুনির্দিষ্টভাবে বলা না গেলেও মুখের ক্যানসারের ঝুঁকির সঙ্গে কিছু বিষয়ের সংশ্লিষ্টতা আছে।

  • মুখে ঘা, জিবে ঘা বা গোটা, ভাঙা দাঁতের ঘর্ষণ থেকে সৃষ্ট ঘা নিয়ে রোগীরা সঠিক চিকিৎসা না নিয়ে অযথা সময় নষ্ট করেন বা অপচিকিৎসার দিকে ঝোঁকেন। এই দেরির কারণে তা মুখের ক্যানসারে রূপ নিতে পারে।

  • ধোঁয়াবিহীন তামাক যেমন জর্দা, সাদা পাতা, গুল ক্যানসার তৈরিতে শক্ত ভূমিকা রাখে। ধূমপান, হুক্কা, পাইপ যথেষ্ট ঝুঁকিপূর্ণ।

  • প্রাকৃতিক দাঁত বা কৃত্রিম দাঁত অথবা ফিলিংয়ের ভাঙা অংশ, জমে থাকা পাথর বা ক্যালকুলাসের ভাঙা অংশ বা যেকোনো ধারালো অংশ থেকে সৃষ্ট ক্ষত ক্যানসারে রূপ নিতে পারে।

  • বিশেষ প্রজাতির ভাইরাস যেমন হিউমান প্যাপিলোমা দ্বারা সৃষ্ট ক্ষত ভয়ংকর হতে পারে।

  • দীর্ঘমেয়াদি অপুষ্টি, রোগ প্রতিরোধক্ষমতা হ্রাসে মুখে ক্ষত হতে পারে।

  • মা–বাবা বা পরিবারের অন্য কারোর ক্যানসারের ইতিহাস থাকলে অধিক সতর্ক থাকতে হবে।

  • দাঁতের অস্বাভাবিক অবস্থান যেমন আক্কেল দাঁত বাঁকা হয়ে উঠে গালে বা জিবে কামড় লাগা থেকে ধীরে ধীরে ক্যানসার হতে পারে।

সব ক্ষত ক্যানসার নয়

বিশেষ ধরনের কিছু ঘা যেমন ইরাইথ্রোপ্লাকিয়া, লাইকেন প্লানাস, লিউকোপ্লাকিয়ার মতো অস্বস্তিকর ক্ষত হলে যথাযথভাবে চিকিৎসকের পরামর্শে না থাকলে ক্যানসারে রূপ নিতে পারে। অনেক সময় এগুলোকে অটোইমিউন রোগের আওতায় ধরা হয়।

প্রতিরোধে সচেতনতা

নিয়মিত মুখের স্বাস্থ্য পরিচর্যা নিশ্চিত করতে হবে। তাজা ফরমালিনমুক্ত মৌসুমি ফলমূল, শাকসবজি, দুধ, টক দই, ছোট মাছ, আঁশযুক্ত খাবারসহ সুষম খাবারে মনোযোগী হতে হবে। চিনি বা মিষ্টি জাতীয় খাদ্য কমাতে হবে। পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ পানি পান ও রক্ত সঞ্চালন ঠিক রাখতে ব্যায়াম করতে হবে।

চিকিৎসা

ক্যানসার সহজেই শনাক্ত করা যায় বায়োপসির মাধ্যমে। যত দ্রুত এ রোগ শনাক্ত হবে চিকিৎসার সফলতাও তত বেশি হবে। রোগের ব্যাপ্তির ওপর নির্ভর করে কেমোথেরাপি বা রেডিওথেরাপি দেওয়া হয় বা অস্ত্রোপচার করা হয়।