
বরেন্দ্র বার্তা ডেস্ক : ফেনীর সোনাগাজীতে পরীক্ষাকেন্দ্রের আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফির(১৮) গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে হত্যাচেষ্টা চালায় দুর্বৃত্তরা। শনিবার (৬ এপ্রিল) সকালে সোনাগাজী পৌর এলাকার ইসলামিয়া সিনিয়ার ফাজিল মাদ্রাসাকেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে। ঐ ছাত্রী ঐ মাদ্রাসা থেকেই আলিম পরীক্ষা দিচ্ছিলেন।
পরীক্ষার জন্য নির্ধারিত কক্ষ থেকে ছাদে ডেকে নিয়ে কয়েকজন বোরকা পরা নারী পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যার চেষ্টা করে বলে অভিযোগ করেছেন ঐ শিক্ষার্থীর পরিবারের সদস্যরা। তারা জানান, মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা সিরাজ উদ্দৌলার বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগে দায়ের করা মামলা তুলে না নেয়ায় এ ঘটনা ঘটেছে।

এ তথ্য ফেনী সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় স্থানীয় পুলিশকেও জানিয়েছেন ঐ শিক্ষার্থী। তার অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় এ দিন বিকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের ১০২ নম্বর কক্ষে ভর্তি করা হয়। পরে তাকে নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিইউ) ভর্তি করা হয়।
এ ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মর্মাহত ও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের প্রধান সমন্বয়ক ডা. সামন্তলাল সেন।
রোববার (৭ এপ্রিল) দুপুরে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার কার্যালয়ে দেখা করতে যান। এ সময় প্রধানমন্ত্রী তাকে এ ঘটনায় উদ্বেগের কথা জানান।
বেলা ৩টার দিকে ঢামেক হাসপাতালে ডা. সামন্তলাল সেন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফেনীর ওই ছাত্রীর সার্বিক দায়িত্ব নিয়েছেন। তিনি তার চিকিৎসাসহ সার্বিক বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বলেছেন।
তিনি আরও বলেন, এ ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতারে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। আমরা মেয়েটির চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছি। তার অবস্থা এখনও আশঙ্কাজনক।
বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের সহকারী অধ্যাপক নাসির সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। বোর্ডের মতামতের ওপর ভিত্তি করে চিকিৎসা শুরু করা হয়েছে। আজ তাকে নলের মাধ্যমে খাবার খাওয়ানো হয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতি আশঙ্কাজনক। এখনও কিছু বলা যাচ্ছে না পরিস্থিতি কোন দিকে যাবে।
মেয়েটির বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান তাঁর বোনের জন্য সবাইকে দোয়া করতে অনুরোধ করেছেন। তিনি বলেন, চিকিৎসকেরা আজ তাঁদের কিছু বলেননি। তবে গতকালই ভর্তি হওয়ার সময় নুসরাতের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছিলেন।
অপরদিকে শনিবার চিকিৎসকেরা জানিয়েছিলেন, আগুনে নুসরাতের শরীরের ৭৫ ভাগ পুড়ে গেছে। যার মধ্যে ৪০ ভাগই গভীর। ঢামেকে আনার পরপরই তার একটি অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। এখন তাকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিউ) চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
এদিকে , ছাত্রীর গায়ে আগুন দেয়ার ঘটনায় মাদরাসাসহ গোটা উপজেলায় থমথমে অবস্থা বিরাজ ও মাদরাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মাঝে চরম অতঙ্ক বিরাজ করছে। ঘটনার দিন শনিবার বিকাল থেকে মাদরাসা হোস্টেল ছেড়ে চলে গেছে শিক্ষার্থীরা। মাদরাসায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, শনিবার পরীক্ষা কেন্দ্রে ওই মাদরাসার শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিত (১৮) গায়ে আগুন দেয়ার ঘটনায় আজ রবিবার জরুরি সভায় বসেছে ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরা। এ সময় কমিটির সভাপতি ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) পিকেএম এনামুল করিম, সহসভাপতি ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রুহুল আমিনসহ অপরাপর সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় আগামী ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত মাদরাসার স্বাভাবিক কার্যক্রম ও অনির্দিষ্টকালের জন্য মাদরাসা হোস্টেল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও অধ্যক্ষ এস এম সিরাজ উদ দৌলাকে গ্রেফতারের দিন থেকে সাময়িক বরখাস্ত করাসহ আরও কয়েকটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
সিদ্ধান্তগুলো হলো :
১। ভিকটিম নুসরাতের চিকিৎসা সহযোগিতার জন্য মাদ্রাসা তহবিল এবং শিক্ষকদের পক্ষ থেকে দুই লক্ষ টাকা অনুদান প্রদান করা।
২। গায়ে আগুন দেওয়া দুর্বৃত্তদের গ্রেফতার এবং আদালতে সোপর্দ করার জন্য মাদ্রাসার পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা প্রদান।
৩। মাদ্রাসার নিরাপত্তার জন্য দ্রুত সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা।
৪। মাদ্রাসার জ্যেষ্ঠ শিক্ষককে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব প্রদান।
৫। আলিম পরীক্ষা চলার সময় শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ রাখা।
৬। কেন্দ্রের নিরাপত্তা জোরদার করার জন্য উপজেলা প্রশাসনকে অনুরোধ করা।
মাদরাসা ম্যানেজিং কমিটির সহসভাপতি রুহুল আমিন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোহেল পারভেজ বলেন, মাদরাসা বন্ধ হলেও ওই মাদ্রাসা কেন্দ্রে বোর্ড নির্ধারিত আলিম পরীক্ষা যথা নিয়মে চলবে।
এ দিকে রবিবার সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন চট্টগ্রাম বিভাগের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার আবুল ফজল। এর আগে ফেনীর পুলিশ সুপার এসএম জাহাঙ্গীর আলম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বলেন, ঘটনাটি অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে। পুরো তদন্ত শেষ হওয়ার পরই প্রকৃত কারণ জানা যাবে।