আইএমএফের চাপে পাকিস্তানে বিদ্যুৎ ব্যবহারে সারচার্জ

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) চাপে পাকিস্তানে ইউনিটপ্রতি বিদ্যুৎ ব্যবহারে ৩ দশমিক ৮ রুপি সারচার্জ আরোপ করা হয়েছে। দেশটির বিদ্যুৎগ্রাহকদের আগামী আগামী চার মাস এই হারে সারচার্জ দিতে হবে। তবে এরপর আগামী অর্থবছর জুড়ে ইউনিটপ্রতি ১ দশমিক ৪৩ রুপি করে দিতে হবে।

চলতি মার্চ মাসের ১ তারিখ থেকে এই সারচার্জ কার্যকর হবে। পাকিস্তানের ন্যাশনাল ইলেকট্রিক পাওয়ার রেগুলেটরি অথরিটি (নেপ্রা) সরকারের এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করেছে। দেশটির বিদ্যুৎ খাতের ২ লাখ ৬০ হাজার কোটি ডলারের ঋণ পরিশোধে আইএমএফ এই সারচার্জ আরোপের শর্ত দেয়। সেই শর্ত মেনে পাকিস্তান সরকার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। খবর দ্য ডনের।

তবে নেপ্রা সরকারের এই সিদ্ধান্তে খুশি নয়। সংস্থাটির চেয়ারম্যান ও চার সদস্য গত সপ্তাহের এক শুনানিতে বারবার এই প্রশ্ন তুলেছেন যে সরকারের অদক্ষতা, অব্যবস্থাপনার কারণে যে জের সৃষ্টি হয়েছে, তা পূরণ করতে তারা কেন সরকারের এই সিদ্ধান্তে সিলমোহর দেবে।

তবে দেশটির আইন ও বিচার মন্ত্রণালয়ের আইনি মতামতের ভিত্তিতে নেপ্রা তার অবস্থান পাল্টায়। আইন মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘ফেডারেল সরকার দাপ্তরিক গ্যাজেটের মাধ্যমে যেকোনো সারচার্জ আরোপ ও তা সম্পর্কে নোটিশ দিতে পারবে।’

এদিকে আইএমএফ যেন পাকিস্তানের কাছে ধরা দিচ্ছে না। আইএমএফের সঙ্গে কর্মী পর্যায়ের ঐকমত্য না হওয়া প্রসঙ্গে পাকিস্তান সরকারের কর্মকর্তাদের অভিযোগ, আইএমএফ জনসমক্ষে বলছে গরিববান্ধব নীতি করতে; কিন্তু আদতে তারা যা বলছে, তাতে গরিব মানুষের জীবন আরও কঠিন হয়ে যাবে।

আইএমএফ এখন চাচ্ছে, পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংক যেন মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে দ্রুত নীতি সুদহার বৃদ্ধি করে। এ ছাড়া অন্য যেসব বিষয়ে তাদের অগ্রাধিকার পরিবর্তন হয়েছে, সেগুলো হলো মুদ্রার বিনিময় হার নির্ধারিত না রাখা, যাতে যুদ্ধবিধ্বস্ত ও নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত আফগানিস্তানে অর্থ পাচার না হয়, বন্ধু রাষ্ট্রগুলো পাকিস্তানকে সহায়তা করবে—এই মর্মে লিখিত নিশ্চয়তা ও বিদ্যুতে সারচার্জের বিধান অব্যাহত রাখা।

দ্য ডন আরও জানিয়েছে, আইএমএফ ধনীদের ওপর করারোপের কথা বললেও এখন বিক্রয় কর বৃদ্ধির জন্য চাপাচাপি করছে। এতে মূল্যস্ফীতির হার আরও বাড়বে। কিন্তু ব্যাংকের মতো প্রতিষ্ঠানের বিদেশি মুদ্রা লেনদেনে করারোপের প্রস্তাবের বিরোধিতা করছে তারা। আবার বন্যার ক্ষয়ক্ষতি পোষাতে উচ্চ আয়ের মানুষের ওপর লেভি আরোপেরও বিরোধিতা করছে আইএমএফ।

এদিকে ইকোনমিক টাইমসের এক খবরে বলা হয়েছে, অর্থনৈতিক দীনতা মোকাবিলায় পাকিস্তান গত ৭৫ বছরে ২৩ বার আইএমএফের বেইল আউল প্যাকেজ সহায়তা নিয়েছে।

এ প্রসঙ্গে স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তানের সাবেক গভর্নর মুর্তজা সায়্যিদ জিও নিউজকে বলেছেন, ‘বাস্তবতা হলো আমরাই হলাম আইএমএফের সবচেয়ে নিয়মিত গ্রাহক।’ প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ ভারতের সঙ্গে তুলনা দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে একই সঙ্গে স্বাধীনতা অর্জন করা ভারত মাত্র সাতবার আইএমএফের দ্বারস্থ হয়েছে। ১৯৯১ সালে মনমোহন সিংহের যুগান্তকারী সংস্কারের পর থেকে তারা একবারও আইএমএফের কাছে যায়নি।’

You may have missed